খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ মে, ২০২৪

Breaking News

  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখালো যশোর-চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৮ ও খুলনায় ৪২
  সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দুর্নীতি অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আবেদন

অরক্ষিত খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও এইচ এস টিটি আই

একরামুল হোসেন লিপু

ড্রেন নির্মাণের মাটি খুঁড়তে সীমানা প্রাচীর ধসে যাওয়ায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য খুলনার দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানের নারী হোস্টেলের প্রশিক্ষণার্থীদের। প্রতিষ্ঠান দু’টির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতিষ্ঠানের ভিতরে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির ভিতরে প্রবেশের মূল গেটটি ধসে পড়ার মারাত্মক আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েট এপ্রোচ সড়কের আধুনিকায়নের জন্য ফুলবাড়িগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুল পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিঃ। ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গত এক মাস পূর্বে প্রতিষ্ঠান দু’টির সীমানা প্রাচীর বরাবর ভেকু দিয়ে ৭-৮ ফুট গর্ত করে। সীমানা প্রাচীর বরাবর গর্ত করার সময় প্রতিষ্ঠান দু’টির সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ে। এছাড়া দীর্ঘ এক মাস ধরে গর্ত হওয়া ড্রেনের ঢালাই কাজ না করার ফলে প্রতিষ্ঠান দুটিতে প্রবেশের মূল ফটকটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ফোকাল পয়েন্ট ও কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র রায় খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর বরাবর এক ইঞ্চি জায়গা ছাড় না দিয়ে দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণের জন্য ৭/৮ ফুট গভীরতা করেছে কোন প্রটেকশন ছাড়াই। ভেকু দিয়ে যখন ড্রেন নির্মাণের মাটি কাটা হয় সরেজমিনে আমি তখন উপস্থিত ছিলাম। কোন সতর্কতা ছাড়া ভেকু দিয়ে খুব এগ্রেসিভভাবে ড্রেনের মাটি কাটার ফলে প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ে। সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ায় প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মহিলা হোস্টেলে অবস্থানকারীদের নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে, বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষক, শিক্ষিকা, স্টিক হোল্ডরদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কারসহ যানবাহন প্রবেশে। গত ১ মাস ধরে ড্রেনের মাটি খুঁড়ে গর্ত করে রাখার ফলে প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকের গেটটি ধসে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ড্রেন নির্মাণের কাজ আপাততঃ বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে সেটাও আমাদের জানা নেই। ঈদের ছুটি শেষে ২১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি খোলা হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশের মূল ফটক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজস্ব কোন বাজেট বা তহবিল নেই যে, দ্রুততার সাথে সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণ করবো। সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত অরক্ষিত অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলবে। আমরা ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি। নির্মাণ কাজের প্রজেক্ট ম্যানেজারকে সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ‘র সহকারী পরিচালক মুহম্মদ আলী খুলনা গেজেটকে বলেন, সীমানা প্রাচীর পড়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠানটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভীতরে প্রবেশে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের কলেজ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি। খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত প্রকল্পটির ড্রেনের শেষ প্রান্ত সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে এবং এইচ এস টিটি আই এর ভীতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার ফলে এ অঞ্চলের সব পানি ঢুকে এ দু’টি প্রতিষ্ঠানসহ আরো তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ ‘র মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১২ জানুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এপ্রোচ সড়কের আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিঃ দীর্ঘ এক বছরেরও বেশী সময় ধরে রাস্তার দু’পাশে ড্রেন নির্মাণ কাজের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী, সাধারণ পথচারীসহ যানবাহন চালকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এলজিইডি ও কেসিসি’র যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে সড়কটি আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশন গত বছরের ১২ জানুয়ারি মাহবুব ব্রাদার্স প্রাঃ লিঃ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সড়কটি আধুনিকায়নের কার্যাদেশ প্রদান করে। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো।

কার্যাদেশ অনুযায়ী খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল পর্যন্ত ১১৮৫ মিটার সড়ক আধুনিকায়নে ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৩০ টাকা। গভারমেন্ট অফ বাংলাদেশ (জিওবি) এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) কাজটিতে অর্থায়ন করছে।

প্রকল্পের আওতায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বারে আধুনিক ট্রাফিক আইল্যান্ড ও গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বার হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। ২ লেন বিশিষ্ট সড়কটির প্রত্যেক লেন প্রশস্ত হবে সাড়ে ২২ ফুট। ১ ফুট উঁচু হবে সড়কটি। সেই হিসেবে মূল এপ্রোচ সড়কটি প্রশস্ত হবে ৪৫ ফুট। সড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডারসহ দুই পাশে পানি নিষ্কাশনে থাকবে ৫ ফুট প্রশস্ত ড্রেন। ড্রেনের উপর দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!